প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা এবার হাতে তুলে নিতে বদ্ধ পরিকর ম্যানচেস্টার সিটি। আগামী শনিবার ইস্তাম্বুলের ফাইনালে সিটির প্রতিপক্ষ ইন্টার মিলান আন্ডারডগ হিসেবে মাঠে নামলেও তারা শিরোপা জয়ের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে। যদিও ইংল্যান্ড ও ইতালিয়ান দুই জায়ান্টের এই দ্বৈরথে সামগ্রিক বিবেচনায় সিটিকেই সবাই এগিয়ে রাখছে। এই শিরোপা জয়ের মাধ্যমে ঐতিহাসিক ট্রেবলও নিজেদের করে নিতে চায় সিটিজেনরা।

২০০৮ সালে আবু ধাবী ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের কাছে সিটির মালিকানা যাবার পর থেকেই অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের শিরোপা ঘরে তোলা। কিন্তু দীর্ঘ ১৪ বছরেও তা অধরাই থেকে গেছে। যদিও নতুন মালিকের অধীনে নিজেদের ইংলিশ ফুটবলে অন্যতম জায়ান্ট দল হিসেবে ঠিকই প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে সিটিজেনরা। প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয় এখন তাদের কাছে নিয়মে পরিনত হয়েছে।

২০২১ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে গিয়েও অল-ইংলিশ ফাইনালে চেলসির কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়ে হতাশ হতে হয়। গতবার রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল। সেই ম্যাচের প্রতিশোধই যেন এবার নিয়েছে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা। শেষ চারে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মাদ্রিদকে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ ব্যবধানে পিছনে ফেলে স্বপ্নে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। এখন ইস্তাম্বুলে আতার্তুক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে শেষ কাজটুকু সাড়তে চায় সিটি।

২০১৭ সাল থেকে সিটির গোলবার সামলানো এডারসন এ সপ্তাহে বলেছেন, ‘এই শিরোপার জন্য আমরা সবাই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। এই দলটি অনেক জয় দেখেছে, একইসাথে বেশ কিছু পরাজয়ও বরণ করেছে। যে সমস্ত খেলোয়াড় গত পাঁচ থেকে ছয় বছর এখানে আছে তারা এসব জয়-পরাজয়ের সাক্ষী। আমরা পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি।’

গত ছয় মৌসুমে পঞ্চম লিগ শিরোপার পাশাপাশি গত সপ্তাহে ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ২-১ গোলে হারিয়ে এফএ কাপের শিরোপাও ঘরে তুলেছে সিটি। যে কারনে শনিবার জিততে পারলে ১৯৯৯ সালে ইউনাইটেডের পর দ্বিতীয় ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ের কৃতিত্ব অর্জিত হবে।

এফএ কাপের ফাইনালে জোড়া গোল করেছে ইকে গুনডোগান। সিটির আক্রমনভাগে সবচেয়ে ভরসার নাম আর্লিং হালান্ড। ইতোমধ্যেই ক্লাবের হয়ে এবারের মৌসুমে সব মিলিয়ে ৫২ গোল করে ফেলেছেন এই নরওয়েজিয়ান। তার এই গোলগুলো কার্যত সিটিকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

বার্সেলোনার হয়ে তিন মৌসুমে দ্বিতীয় শিরোপার পর গার্দিওলার সামনে এখন সিটির হয়ে ১২ বছর পর তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের সুযোগ। ২০১৬ সালে সিটিতে যোগ দেয়া গার্দিওলা বলেছেন, ‘আমাদের যদি সত্যিকার অর্থেই প্রমান করতে হয় যে আমরা বড় ক্লাবে পরিনত হয়েছি তবে আমাদের অবশ্যই ইউরোপে জিততে হবে। আমাদের অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিততে হবে, এই একটি শিরোপাকে এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নেই।’

এদিকে সিমোনে ইনজাগির ইন্টারেরও হয়তোবা এই ফাইনালের মাধ্যমে অনেক কিছুই বলার আছে। আন্ডারডগ হিসেবেও কোন কোন দল যে নিজেদের এগিয়ে নিতে পারে তার প্রমান মাঠেই দিতে চায় ইন্টার। ৬০’র দশকে দুইবার ইউরোপীয়ান কাপ জয়ী দলটি ইউরোপের সফল ক্লাবগুলোর মধ্যে অনেক পুরনো একটি ক্লাব। সব মিলিয়ে এনিয়ে ষষ্ঠবারের মত তারা ফাইনালে খেলছে। ২০১০ সালে হোসে মরিনহোর অধীনে সর্বশেষ শিরোপা জয়ী দলটি সেবার ট্রেবল জয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। এরপর ইতালিয়ান ক্লাবের আর কোন ট্রফি তুলে ধরা হয়নি।

ইন্টার মিলানের গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা বলেছেন, ‘আমরা একটি বড় ক্লাব এবং আমাদের প্রত্যাশা অনেক। ইন্টার যখন ফাইনালে উঠেছে তখন তারা জয়ের জন্যই খেলবে। আমাদের দলে অনেক বড় মাপের খেলোয়াড় রয়েছে যারা জানে ফাইনালে কিভাবে খেলতে হয়।’

এবারের সিরি-এ লিগে তৃতীয় স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করেছে ইন্টার। এছাড়াও কোপা ইতালিয়ার শিরোপা ঘরে এসেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্বে পোর্তো, বেনফিকা ও এসি মিলানকে বিদায় করে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। গ্রুপ পর্বে কঠিন বাঁধা পেরিয়ে বার্সেলোনাকে হটিয়ে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করেছিল ইনজাগির দল।

এর আগে আতার্তুক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইংলিশ ও ইতালিয়ান ক্লাব মোকাবেলা করেছে। ২০০৫ সালে নাটকীয় ফাইনালে রাফায়েল বেনিতেজের লিভারপুল তিন গোলে পিছিয়ে থেকেও কার্লো আনচেলত্তির মিলানের সাথে ৩-৩ গোলে ড্র করে পেনাল্টিতে জয়ী হয়ে শিরোপা জয় করেছিল।

৭২ হাজার ধারনক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামটি ইস্তাম্বুল শহরের পশ্চিমে ২৫ কি.মি দুরে অবস্থিত। ২০২০ সালের ফাইনালও এই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারনে তা সড়িয়ে লিসবনে অনুষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালেও সিটি বনাম চেলসির ম্যাচটি ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও সে বছরও ম্যাচটি সড়িয়ে পোর্তোতে অনুষ্ঠিত হয়।