মাশরাফি ; নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কলার উঁচিয়ে ২২ গজ জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করা সুঠাম দেহের এক টগবগে তরুণ তুর্কির চেহারা।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সফলতম অধিনায়ক তিনি। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের কাছে আবেগ, শ্রদ্ধা, অনুপ্রেরণার আরেক নাম। দলে ও ড্রেসিংরুমে তার উপস্থিতি ক্রিকেটারদের জোগান দিত উৎসাহ-উদ্দীপনার।
আজ, ৫ অক্টোবর জাতীয় দলের এই পাওয়ার হাউসের ৩৮তম জন্মদিন। ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ নামে ক্রিকেটপাড়ায় পরিচিত এই পেইসার জীবনের ৩৮টি বছর পার করে এদিন পা রাখলেন ৩৯তম বছরে। এদিন তার একমাত্র ছেলে সাহেলেরও জন্মদিন।
১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নড়াইলে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। ডাকনাম রাখা হয়েছিল কৌশিক। নিজ এলাকায় মাশরাফির চেয়ে এই কৌশিক নামেই বেশি পরিচিত তিনি। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি তার ছিল ব্যাপক আগ্রহ। স্কুলের পাশের মাঠেই সারা দিন থাকত তার বিচরণ। দেখতেন বড়দের ক্রিকেট খেলা। সেখান থেকেই আসে ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক।
মাত্র ১১ বছর বয়সেই ম্যাশকে নিজের দল নড়াইল ক্রিকেট ক্লাবে খেলার সুযোগ করে দেন শরীফ। তখন থেকেই গতি দিয়ে সবার নজর কেড়ে নিতে থাকেন মাশরাফি। ১৯৯১ সালে মাগুরায় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) প্রতিভা অন্বেষণ (ট্যালেন্ট হান্ট) ক্যাম্প হয়। সে সময় বিকেএসপির কোচ বাপ্পির সান্নিধ্যে এসে বোলিংয়ের অনেক মৌলিক বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হন মাশরাফি।
পরের বছর খুলনায় খেলার জন্য আমন্ত্রণ পান ম্যাশ। খুলনায় গতি ও সুইং দিয়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দেন এই পেইসার। যার সুবাদে সুযোগ পেয়ে যান খুলনা বিভাগীয় অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলার। অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও ডাক পেয়ে যান দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের বলে। যুব দলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখানোয় ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জাতীয় দলে ডাক পান ডানহাতি এই পেইসার। জাতীয় পর্যায়ে সিনিয়র ডিভিশন লিগ না খেলে সরাসরি জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ায় সে সময় তাকে নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়।
সব সমালোচনার জবাব ম্যাশ দিয়েছিলেন মাঠে বল হাতে। অভিষেক ম্যাচেই ৩.৩১ ইকোনমি রেটে ৪ উইকেট ঝুলিতে পুরেছিলেন এই পেইসার। সেখান থেকেই শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি নড়াইলের কৌশিককে। এরপরের নিউজিল্যান্ড সিরিজেই পেয়ে যান ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খেতাবটি। জাতীয় দলে তার অসামান্য অবদান এবং আত্মবিশ্বাস দেখে ২০০৯ সালে অধিনায়কত্বের গুরুভার দেয়া হয়েছিল তাকে। কিন্তু দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পরপরই হাঁটুর ইনজুরি তাকে এক বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে ছিটকে দেয়। তখন থেকেই শুরু হয় তার ইনজুরির সঙ্গে যুদ্ধও, যা এখনও চলছে।
২০১৪ সালে ফের জাতীয় দলের দায়িত্ব পান এই কাপ্তান। এবারে দায়িত্বটা ছিল শুধু সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে। বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন ২০১৫ ও ২০১৯ সালের ওয়ানডে ও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ইনজুরি বারবার বাদ সাধতে থাকে ম্যাশের ২২ গজের পথচলায়। হার না মেনে ২০২০ সাল পর্যন্ত চালিয়ে যান অধিনায়কত্ব। ২০২০ সালের জিম্বাবুয়ে সিরিজের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে তার অধিনায়কত্বের অধ্যায়ের।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ওয়ানডেতে সফলতম অধিনায়ক তিনি। তার নেতৃত্বে ৮৮ ওয়ানডের ভেতর ৫০টিতেই জয় পেয়েছেন লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি ২৮টি টি-টোয়েন্টির ভেতর ১০টিতে এবং ১টি টেস্টের ভেতর ১টিতেই জয়ের রেকর্ড রয়েছে মাশরাফির।
লাল সবুজের জার্সি গায়ে চাপিয়ে ৩৬ টেস্টে ম্যাশ ঝুলিতে পুরেছেন ৭৯ উইকেট। সেই সঙ্গে ২২০ ওয়ানডেতে তার শিকার ২৭০ উইকেট ও টি-টোয়েন্টিতে ৪২টি। ব্যাট হাতে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে মাশরাফি করেছেন ২ হাজার ৯৬১ রান।
রাজনীতিতে নাম লেখানো মাশরাফি ক্রিকেট থেকে দূরে অনেক দিন। এরপরও দেশের ক্রিকেট ভক্তদের কাছে চোখের মনি তিনি। মাশরাফী আছেন তাদের হৃদয়জুড়ে, থাকবেনও।
শুভ জন্মদিন কাপ্তান।